পৃষ্ঠাসমূহ

ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১২

ওয়াশিংটন ডিসি'র পিঠা উৎসবে এক সন্ধ্যা


Click here to read in English

ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রো এলাকার অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় উৎসব হিসেবে পিঠা উৎসব গত সাত বছর থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভোলাপমেন্ট ইনক (বিসিসিডিআই)এর উদ্যোগে আয়োজিত বাৎসরিক এই উৎসবে এলাকার শত শত বাংলাদেশী পিঠাপ্রেমী যোগ দিয়ে থাকেন। সুদূর প্রবাসের মাটিতে হাতে বানানো পিঠার মধ্যে তারা খুঁজে পান বাংলাদেশের অকৃত্রিম ছোঁয়া।

গত জানুয়ারীর ২৮ তারিখে ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টির ওয়েস্ট স্প্রিংফিল্ড হাই স্কুলের অডিটোরিয়ামে এখানকার বাংলাদেশীরা সপরিবারে ও প্রিয়জনকে নিয়ে সানন্দে যোগ দেন এই বিশাল পিঠা উৎসবে। বাংলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনায় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত শেষ হওয়ার পর এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাস্ট্রদূত জনাব আকরামুল কাদের। একদিকে যখন পিঠাপ্রেমীদের ভীঁড় দ্রুত জমে উঠছিল পিঠার দোকানগুলো ঘিরে, তখন অডিটোরিয়ামের অন্যপাশে  মঞ্চে এসে বাংলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিল্পীরা একে একে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান উপহার দিতে থাকেন। প্রতি বছর পিঠা উৎসবের এই সময়ে বিসিসিডিআই-এর বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের পালা বদল ঘটে। নব নির্বাচিত বোর্ডের সদস্যরা নতুন বছরের দায়িত্ব শুরু করেন আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের মাধ্যমে।

নীচে এই উৎসবের ভিডিও হাইলাইটস দেখুন:



বিসিসিডিআই ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রো এলাকার একমাত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যা এখানে বসবাসকারী বাংলাদেশী নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি শেখাবার জন্য পুরোপুরি উৎসর্গিত।  প্রতি সপ্তাহে শনিবার সকালে বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের বাবা মায়ের সাথে আলিংটনস্হ গানস্টন কমিউনিটি সেন্টারে চলে আসে বাংলা শিখতে। তারা শেখে কিভাবে তাদের বাবা মায়ের প্রিয় ভাষা বাংলাকে লিখতে ও পড়তে হয়, শিখে গান আর নাচ। তারা একান্তভাবে পরিচিত হয়ে উঠে দেশজ সংস্কৃতির সাথে। বিসিসিডিআই পরিচালিত বাংলা স্কুল সারা বছর জুড়ে বাংলা সংস্কৃতিকে সগর্বে প্রকাশ করে পিঠা উৎসব, একুশে ফেব্রুয়ারী, পহেলা বৈশাখ, উপহার বাংলা মেলা, ঈদ/পুজার উৎসবের মতো দেশজ উৎসব অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে।

পিঠা উৎসবের এই মনোমুগ্ধকর আয়োজন আমাদের সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ফেলে আসা বাংলাদেশের চিরায়ত জীবন-ধারায় যেখানে পিঠা হচ্ছে হাতের অপূর্ব কারুকার্যে মিষ্টির বিন্যাস। চাল, চিনি, গুঁড় আর নারিকেল দিয়ে সাধারণত তৈরী হয় বিভিন্ন স্বাদ ও নকশার পিঠা যার সাথে জড়িয়ে থাকে সুগভীর ভালবাসা, যত্ন আর মমত্বের বাঁধন। বাংলাদেশের মেয়েরা রান্নাঘরে অনেক কস্ট করে এই পিঠা তৈরী করেন, এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে তাদের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সৃজনশীলতা ও শৈল্পিক মুনশিয়ানা। পিঠা মানে একখন্ড মিষ্টি ভালবাসা। পিঠা হিসেবে চিতই, পাটিসাপটা, পাঁকন, ভাঁপা, কুলসী, অন্তসা, কাঁটা পিঠা, চিতই পিঠা, গোকুল, মুঠি, জামদানি, নকশী, পাতা, তেজপাতা, ঝুরি, ফুরঝুরি আর বিবিখানা সবার কাছে কমবেশী পরিচিত।

পিঠা হচ্ছে বাংলাদেশী মিষ্টান্নের অনন্য ও নিঁখুত প্রকাশ যা সযত্নে লালন ও সংরক্ষণের প্রয়োজন। এবারের পিঠা উৎসবের বিভিন্ন স্টল ঘুরতে ঘুরতে মনে হলো কতোটা সময় ব্যয় করে বিভিন্ন নকশা, বাহার ও স্বাদের এই চমৎকার পিঠাগুলো তৈরী করা হয়েছে। সময়ের হাত ধরে আমিও স্মৃতিকাতর হয়ে ফিরে যাই ফেলে আসা অতীতের দিনগুলোতে। স্পস্টভাবে দেখতে পাই, কোন এক শীতের সকালে মায়ের হাতে বানানো মায়া জড়ানো অপূর্ব স্বাদের গরম গরম পিঠাগুলো। দেখতে পাই আমার দাদী আদর করে পিঠার একটা টুকরো আমার মুখের মধ্যে গুঁজে আরও নেবার জন্য বলছেন। পিঠা উৎসব আমাদের সবাইকে নিয়ে যায় দেশজ সংস্কৃতির সেই শেকড়ের খুব কাছাকাছি। আমি বিসিসিডিআই-এর আয়োজক ও স্বেচ্ছাসেবী যারা অনেক কস্ট করে এই উৎসবের আয়োজন করেছেন তাদের সবাইকে প্রাণঢালা শ্রদ্ধা জানাই। পিঠা উৎসব থেকে বাড়ী ফিরতে ফিরতে আমি ভাবি, একটি জনগোষ্ঠীর পরিপূর্ণ  বিকাশ সম্ভব হয় যখন এর সদস্যরা তাদের সংস্কৃতির শেকড়কে হৃদয়ের খুব গভীরে অনুভব করে সযত্নে তার পরিচর্চা করতে থাকেন। পিঠা উৎসব তারই একখন্ড প্রকাশ।

ছবি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন