পৃষ্ঠাসমূহ

নভেম্বর ০৪, ২০২২

একটি হালকা প্রেমের ছোটগল্প


কলেজের বন্ধু সুজনের বাসায় নিমন্ত্রণে আমি সস্ত্রীক এসেছি। রাতের খাবার শেষে মাত্র আমরা চার বন্ধু ফায়ার প্লেসের সামনে বসে গল্প করছি। হালকা আলোয় আমরা বন্ধুরা ফায়ার প্লেসের উষ্ণতায় চায়ের কাপে চুমক দিচ্ছি। চলছে লতাজীর বাংলা গান:

“প্রেম একবারই এসেছিলো নীরবে
আমারই এ দুয়ার প্রান্তে
সে তো হায় মৃদু পায়
এসেছিলো পারিনি তো জানতে
প্রেম একবারই এসেছিলো নীরবে...”।

সুজন, ডিউক, সেলিম আর আমি খুব মন দিয়ে গানটা শুনছি। অনেকদিন পর গানটি মুগ্ধ হয়ে আবার শুনছি। তার মাঝে সুজনের মাথায় হঠাৎ একটা নতুন পোকা মোচড় দিয়ে উঠল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “দোস্ত, তোর প্রেমের গল্প বল”।

আমি তো একেবারে আকাশ থেকে পড়লাম। আমি হাসতে হাসতে বললাম, “আমার জীবনে কোন প্রেম আসেনি”। সাথে সাথে বাকী তিন বন্ধু আমাকে চেপে ধরে বলল, “অবশ্যই এসেছে”। ভাবীরা পাশের রুমে কিছু একটা নিয়ে রসিয়ে গল্প করছে, তাদের হাসির কলকল শব্দ শুনে এরাও ভাবছে, “নতুন কিছু শুনতে হবে”। অনেক পীড়াপীড়ির পর আমি বললাম, “বলা যাবে, কিন্তু ভাবীদের বা আমার স্ত্রীকে বলা যাবে না”। সমস্বরে এরা বলে উঠল, “কাকপক্ষীও জানবে না”। চেয়ার টেনে তিনজনই ফায়ার প্লেসের কাছে এসে আমাকে ঘিরে বসল। এদের চোখের মণিও যেন জ্বলে উঠেছে, সেটা কি ফায়ারপ্লেসের ধিকধিক আগুনের রিফ্লেকশন, না অজানা রোমাঞ্চকর কিছু শুনার প্রবল ঔৎসুক্য – তা ঠিক বুঝে উঠলাম না। প্রেমের কথা শুনে মধ্যবয়সী মানুষের মনেও যে একরাশ তারুণ্য ও উচ্ছ্বলতা নেমে আসে, তা দেখে আমিও একটু আনন্দ খুঁজে পেলাম।

আমি কাকে প্রেমের গল্প বলব? সুজন আর সিম্মি ভাবী এক অবিশ্বাস্য সফল প্রেমিক জুটি। ইংরেজীতে যেমনটা বলে, “মেইড ফর ইচ আদার”। ক্লাশ টেনে পড়তে তারা প্রেমে পড়ে। সুজনদের ঠিক সামনের বাসায় ভাড়া নিয়ে সিম্মি ভাবীরা এসেছিলেন। বারান্দায় সিম্মিকে প্রথম দেখাতেই সুজন হারিয়ে গিয়েছিল। প্রথম দৃষ্টিতেই প্রেম! ভাল লাগা কি কোন সমীকরণে চলে? কিন্তু সিম্মির বাবা-মা’র চোখে যখন সুজনের বারান্দায় আনাগোণা আর রাস্তায় দেবদাসের মতো দাঁড়িয়ে তাদের মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেন তখন তারা খুবই বিরক্ত হয়ে পড়েন। বছর খানেকের মধ্যে সুজনদের পাড়া ছেড়ে সিম্মিরা চলে গেল বেশ দূরে। মেয়ের বাবা-মায়েরা উঠতি বয়সের ছেলেদের হ্যাংলামি অথবা অতিভক্তির কোনটা কখনই পছন্দ করে না -এই কথাটা সেই স্কুল জীবনে অপরিপক্ক ও অপ্রেমিক আমি সুজনকে অনেকবার বলেছিলাম। কিন্তু প্রেমিক মন কি মানে? যা হোক, কলেজ শেষ করে সুজন চলে এলো আমেরিকায় আন্ডারগ্রেড করতে। কিন্তু সুজন-সিম্মির প্রেম কোন বাধাই মানল না। আন্ডারগ্রেড করে সে দেশে গিয়ে সিম্মিকে ঠিকই বিয়ে করে নিয়ে চলে এলো আমেরিকায়। স্কুল জীবনের প্রথম ভাল লাগা অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে ঠিকই ঝর্ণার মতো নিজস্ব গতিতে খুঁজে পেল সফল পরিণতি। এদের প্রেমের নাটকীয় উপাখ্যান লিখতে হলে একটি মোটা বই লেখা হয়ে যাবে।

এর মাঝে সিম্মিভাবী কি কাজে এদিকে এসে আমাদের এরকম গোল হয়ে নীচুস্বরে কথা বলতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “কি ভাই, আপনারা মনে হয় খুব সিরিয়াস কিছু নিয়ে কথা বলছেন”? আমি প্রমাদ গুণে তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম, “না ভাবী, আসন্ন মধ্যবর্তী ইলেকশন নিয়ে সিরিয়াস আলাপ হচ্ছে”। আমার উত্তর ভাবীর খুব একটা মনোপুত হলো না। কথা না বাড়িয়ে তিনি চলে গেলেন পাশের রুমে যেখানে উনারা গল্প করছেন। বিধাতা জন্মের সময় সব মেয়েদের চোখে অদৃশ্য এক্সরে মেশিন বসিয়ে দিয়েছেন, তাই সম্ভবত কোন কিছুই দের চোখ এড়িয়ে যায় না! এদিকে আমার বন্ধুদের তর সইছে না। এরা আমাকে জেঁকে ধরে জিজ্ঞেস করল, “ঘটনা ঘটল কবে”? তাদের সীমাহীন আগ্রহে আমিও উদ্দীপ্ত। আমি নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিলাম, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন বরণের দিনে..”। ডিউক বলে উঠল, “আহা, বল বল। প্রেমে পড়ার জন্য এর চেয়ে পারফেক্ট দিন কি আর হতে পারে”? আমি করুণ দৃস্টিতে তাকিয়ে স্মিত হাসলাম।

ফায়ারপ্লেসের আগুনের শিখার দিকে তাকিয়ে আমিও অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি। আহা, নবীনবরণের দিনটি কি রঙ্গিন আর উৎসবমূখর ছিল। সাথের সব বান্ধবীরা সবাই শাড়ী পড়ে এসেছিল। সবাইকে খুব সুন্দর লাগছিল। মনে মনে সম্ভবত ভেবেছিলাম, এরা সবসময় এভাবে সেজে থাকে না কেন? এতো বছর পরও ভুলতে পারিনি। সবার চোখে জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম স্বপ্ন বিচরণ করছিল। ডিউক বলে উঠল, “মনে আছে নবীনদের পক্ষ থেকে তুই বক্তৃতা দিয়েছিলি”। ঠিকই তো। অনার্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষক তাহের স্যার নবীনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমাকে ঠিক করলেন। আমার বক্তৃতা শুধু দু’মিনিটের ছিল। কিন্তু তাতে ছিল নতুন আশা ও প্রত্যয়ের সাহসী শব্দগুলোর অপূর্ব বিন্যাস। সম্ভবত: এই দিনটি আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল।

নবীন বরণ অনুষ্ঠানের শেষ সারিতে বসেছিলেন আমাদের সিনিয়র মুরাদ ভাই । আমাকে দেখেই তিঁনি বললেন, “তোমার বক্তৃতা সত্যি চমৎকার হয়েছে”। শুনে আমার মুখে এক ঝলক হাসি। মাত্র দু’দিন আগে ডিপার্টমেন্টের সহকারী লাইব্রেরীয়ান বেলাল ভাই তাঁর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমরা প্রথম বর্ষে, মুরাদ ভাইদের ব্যাচ তখন অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে উঠেছে। উনাকে সবসময়ই লাইব্রেরীতে বসে থাকতে দেখতাম। মনে হতো, ওটাই উনার ঘরবাড়ী। উনি ছিলেন আমাদের ডিপার্টমেন্টের গর্ব। অনার্সে তিঁনি শুধু ডিপার্টমেন্টেই প্রথম হননি, বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মধ্যে প্রথম হয়ে ইতিহাস সৃস্টি করেছিলেন। বিসিএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ফরেন সার্ভিসে গিয়েছিলেন। তার গল্প এখানে আসার পর থেকে শুনছি। তার চোখে পড়াই আমার ভাগ্য। আমার প্রেমের গল্পের যাত্রাও এখান থেকেই শুরু।

এধরণের স্মৃতিচারণে আমার বন্ধুদের মোটেও আগ্রহ ছিল না। তাদের বিরক্তি বেড়েই চলছে। সুজন বলে উঠল, “সবই বুঝলাম। কিন্তু মেয়েটা কে ছিল? কে সেই সৌভাগ্যবতী”? আমি রেগেই বলে উঠলাম, বাঙ্গালীদের সমস্যা তো একটাই। গল্প শুরু হওয়ার আগেই শেষটা জানতে চায়। বই পড়তে গিয়ে প্রথম পাতা আর শেষ পাতা একসাথেই শেষ করে ফেলে। মুভি শুরু হওয়ার আগেই শেষটা জেনে রাখে। সাসপেন্স শব্দটা আমাদের রক্তে নেই বললেই হয়। “বাছা, একটু ধৈর্য ধরো”, আমি বললাম। ফ্লাস্ক থেকে আরেক কাপ চা নিয়ে বসলাম। সিগারেটখোর ডিউক বিড়ি ধরাবার জন্যও বিরতি চাইল না। আমার ঠোঁটে হাসি লুকিয়ে আছে।

আবার ফিরে গেলাম, মুরাদ ভাইয়ের কথায়। অনুষ্ঠান শেষে মুরাদ ভাই আর তার সতীর্থদের সাথে আমি বসলাম। পাশের ক্যান্টিন থেকে চা-নাস্তা এলো। কোন ভণিতা না করেই আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ভালো করতে হলে কি করতে হবে”? প্রথম বর্ষের সব ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে এই কথাটাই জানতে চায়। কিন্তু তার উত্তর শুনে আমার আক্কেলগুড়ুম: “ভাল করতে হলে প্রেম করো” মুরাদ ভাইয়ের উত্তর। আমি বড্ডো অপ্রস্তুত। আমি হেসে উঠলাম, “আপনি কি মজা করছেন”? কিন্তু ভদ্রলোক অত্যন্ত সিরিয়াস। আমি তাকিয়ে দেখি পাশে তার ক্লাশমেইটরা। কোন প্রেমিকা নিয়ে তাঁকে বসে থাকতে কখনো দেখিনি। তাহলে প্রেম করতে বলছেন কেন? হাজারটা প্রশ্ন এসে মাথার দু’পাশে গিজগিজ করছে। আমি ধরেই নিলাম, উনি আমার সাথে মজাই করছেন।

আমার গল্পের এ পর্যায়ে আমার বন্ধুরা একদম ফ্রোজেন হয়ে আছে। সম্ভবত ওরা আন্দাজ করতে চাচ্ছে আমার এই গল্পের শেষাংশ। সমস্বরে সবার প্রশ্ন: “তারপর”? আমি বললাম, তার সপ্তাহখানেক পর একদিন দুপুরে লাইব্রেরীতে বললাম, “মুরাদ ভাই, ভাল করতে হলে প্রেম করতে হবে? মানে কি”? তাঁর সিরিয়াস উত্তর যেটা ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট, বললেন, “প্রেম করো, হয় মেয়ের সাথে, না হয় বইয়ের সাথে। যে কোন একটা বেছে নাও”। আমি বেছে নিলাম দ্বিতীয়টা। তারপর থেকে শুরু হলো বই নিয়ে তার সাথে সখ্যতা। বই নিয়ে আলোচনা। আমি ছায়ার মতো তাকে অনুসরণ করতাম, বৃটিশ কাউন্সিলে, আমেরিকান কালচারাল সেন্টার লাইব্রেরীতে, গণ উন্নয়ন গ্রন্থাগারে অথবা নিউমার্কেটের বইপাড়ায়। একসাথে ঘুরতাম, গন্তব্য একটি বই আর বই। বই আর লেখা নিয়ে ক্রিটিক্যাল রিভিউ। সবচেয়ে মজা হতো একুশের বইমেলার সময়। মানিব্যাগ শুণ্য হওয়া পর্যন্ত আমাদের বইকেনা চলতো। আহা, নতুন বইয়ের পাতা গন্ধ নেশা জাগাত।

বইয়ের সাথে প্রেমে পড়লে আর কিছুই চোখে পড়ে না। বইয়ের অক্ষরে নিমগ্ন দৃষ্টি, অনেক মোহনীয় দৃষ্টিকে দেখার সুযোগ পায়নি। বছর দু’য়েক পরে কোন এক অপরাহ্নে আমি লাইব্রেরীতে একা একা বসে বেশ ক’টা বই নিয়ে নোট করছি। খুব মনে পড়ছে একজনের কথা। সম্ভবত আমার দু’ব্যাচ জুনিয়র মেয়েটি। চেহারাটা দাগ কেটে রেখেছে, নামটা মনে নেই। লাইব্রেরীতে আমার ডেস্কের পাশে এসে বলল, “ভাইয়া, বই ছাড়া আপনি কি আর কোন দিকে তাকান না”? আমি নিজেকে কোন মতে সামলে বললাম, “কেন আপু, তোমার কি কোন হেল্প লাগবে”? বইয়ের পাতা থেকে তার দিকে চোখ ফেরাতেই মনে হলো, মেয়েটির চোখ অকারণেই ছলছল করছে। আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেল। আমি কোন সঙ্গত কারণ খুঁজলাম না। বুঝলামও না, কিসের অভিমান! আবার নিজের লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। নাহ, সেই মেয়েটিকে আমি আর কখনও আমার মুখোমুখি হতে দেখিনি। হায়রে, সর্বনাশা বইপ্রেম...।

আমার সম্বিৎ ফিরে এলো, ডিইউকের মুখে “শালা” শব্দটা শুনে। তাকিয়ে দেখি ঘড়ির কাঁটা প্রায় রাত ১টা ছোঁবে। বাকীরাও চেয়ার ছেড়ে উঠে গেছে। বুঝলাম, বন্ধুরা যারপর নাই আমার উপর বিরক্ত! এ কি প্রেমের গল্প? প্রেম কি শুধু দেহজ? প্রেম কি শুধু দু’টো প্রাণের বলা বা না-বলা একান্ত সংলাপ? এর মাঝে পাশের রুম থেকে ভাবীরাও এসে হাজির। আমার গল্পে বন্ধুদের মুখের উচ্ছ্বলতা চলে গেছে। একরাশ বিরক্তি আর ক্লান্তি ভীঁড় করেছে তাদের চেহারায়। সিম্মি ভাবী বলল, “আপনাদের আড্ডা কি শেষ”? আমি স্বগত হয়ে বললাম, “ভাবী, এরা বুঝে না। এবারের মিডটার্ম ইলেকশনে রিপাবলিকানরা জিতবে-এটা এরা বুঝতে চাচ্ছে না”। অন্য কেউ না বুঝলেও সিম্মি ভাবী ঠিকই ঠাহর করতে পেরেছে, ইলেকশনের কথা না, আলাপ ছিল অন্য কোন বিষয় নিয়ে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। সবাইকে শুভ রাত্রি জানিয়ে সস্ত্রীক গাড়ীর দিকে এগোলাম।

সেন্টারভিল থেকে আমার বাড়ী আরও চল্লিশ মিনিটের ড্রাইভ। আমার স্ত্রী বলল, “বাহ, আজকে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিলে। ক্লান্ত হওনি দেখি”। উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ীর হেডলাইটের আলোতে আমার ঠোঁটে ঝুলে থাকা হাসিটা বউয়ের চোখ এড়ালো না। মনে মনে ভাবছি, হালকা একটা প্রেমের গল্প দিয়ে কমপক্ষে তিনজনকে বোকা বানানো গেছে। বউ জিজ্ঞেস করে, “হাসছো কেন”? আমি জবাব না দিয়ে বললাম, “গান শুনো”। গাড়ী ছুটছে ষাট মাইল বেগে। আর গাড়ীতে বাজছে লতাজীর গান:

“প্রেম একবারই এসেছিলো নীরবে
আমারই এ দুয়ার প্রান্তে
সে তো হায় মৃদু পায়
এসেছিলো পারিনি তো জানতে
প্রেম একবারই এসেছিলো নীরবে...”।

অক্টোবর ১০, ২০২২

চলুন ঘুরে আসি: গ্রেট ফলস পার্ক

ওয়াশিংটনের অদূরে গ্রেট ফলস পার্ক চমৎকার একটি ঘুরে বেড়াবার জায়গা। এই আটশত একর আয়তনের পার্ক ম্যারিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ার দু’দিক থেকেই দেখা যায়। আজ ঘুরে আসব ম্যারিল্যান্ড দিক থেকে এই পার্ক। এখানে এলে বিশাল বিশাল পাথরের সারির মাঝখান দিয়ে পটোম্যাক নদীর অপূর্ব স্রোতস্বিনী প্রবাহ ও জলপ্রপাত আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। অনেকে বলেন, এটি নায়াগ্রা জলপ্রপাতের অতি ক্ষুদ্র সংস্করণ। কেথাও কোথাও এখানে প্রায় অপ্রশস্ত দুকূলে প্রায় ৭০ ফিটের উপর থেকে পানি খরস্রোতে পড়তে থাকে। বহু দূর থেকেই শোনা যায় গ্রেট ফলসের জলপ্রপাতের বিরামহীন ছন্দের শব্দ।

অক্টোবর ০৬, ২০২২

প্রাণের বইমেলা ২০২২: ঢাকা’র প্রতিবিম্ব

“বিশ্বজুড়ে বাংলা বই” -এই শ্লোগান দিয়ে যখন তৃতীয়বারের মতো আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনের অদূরে ভার্জিনিয়ার স্প্রীংফিল্ডের হলিডে ইন-এ অক্টোবরের ২৯ ও ৩০ তারিখে দু’দিন ব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ডিসি বইমেলা নামের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনটি যখন এই ঘোষণা দেয়, তখন বইপ্রেমী সকলের মাঝে আনন্দের বন্যা শুরু হয়। সময় অতি অল্প, অথচ কর্মযজ্ঞ বিরাট। পাঠক, লেখক, প্রকাশক ও সকল সংস্কৃতিকর্মীদের একত্রিত করে একটি সফল আয়োজনের জন্য শুরু হয় নিয়মিত ও সাপ্তাহিক সভা, প্রতি বৃহস্পতিবার কর্মদিবস শেষে সন্ধ্যালগ্নে স্প্রিংফিল্ডের একটি সরকারী মিলনায়তনে আগ্রহী সবাই যোগ দিচ্ছেন। আলোচনা হচ্ছে বইমেলার আয়োজনের অগ্রগতি নিয়ে। সকল সফল আয়োজনের নেপথ্যে থাকে কিছু পরার্থবাদী মানুষের প্রাণান্তকর প্রয়াস-প্রচেষ্টা, এর কোন ব্যতিক্রম নেই ডিসি’র বইমেলার আয়োজনে। অর্থ দিয়ে, সময় দিয়ে, শ্রম দিয়ে সবাই চাচ্ছে প্রিয় বাংলায় লেখা বইয়ের অফুরন্ত ও রঙ্গিন সমারোহ। বাংলা আমাদের অহংকার, আর বই মেলা তার বহি:প্রকাশ। প্রবাসের মাটিতেও এই উচ্ছ্বাসে কোন ঘাটতি নেই।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রন্থমেলা, ২০২০

ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯

বিদায় ২০১৯

ওয়াশিংটন ডিসি'র এনাকস্টিয়াা নদীর কিনার থেকে সুনীল আকাশ
ইংরেজী বছরের শেষ দিন, বিদায় ২০১৯! ভোর থেকেই অসংখ্য নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তায় ভারী হয়ে উঠেছে আমার ফোনের স্ক্রিন। ঢাকা থেকে ক্রীসমাস ডে তে ডিসিতে ফিরেছি। এসেই অসুস্থ। ডাক্তার দেখে শুনে বললেন, ঠান্ডা বাঁধিয়েছ, ব্রঙ্কাইটিস। অফিস বন্ধ। বাসায় বন্দী। কাশি। শুয়ে বসে বড্ডো অস্বস্তিতে বসবাস। বিপদ সর্বত্র। বাবা অসুস্থ। এ বছর এ নিয়ে চারবার দেশে গেলাম। তার আরোগ্যের শুভ কামনায় ও প্রার্থনায় আমরা সবাই অস্থির সময় কাটাচ্ছি। তারপরও জীবনের চাকা চলে, চালাতেও হয়। ‌এর মাঝে যারা ইংরেজী নতুন বর্ষ উদযাপন করছেন, তাদের সবাইকে জানাই শুভ নববর্ষ

কিন্তু আমার নতুন বছর শুরু হয় বৈশাখের প্রথম দিন। সেই অপেক্ষায় আছি। ইংরেজ আর ইংরেজীর অত্যাচারে সবই হারিয়েছি, থাকুক না আমার বাংলা নববর্ষ,আমার নিজস্ব পরিচয়ে আর অহংকারে। এই হিমশীতল শুস্কতায় অপেক্ষায় আছি করুণার। অপেক্ষায় আছি আনন্দঘন নতুন সকালের।

জানুয়ারী ০১, ২০১৮

স্বাগতম ২০১৮


শুভ ইংরেজী নববর্ষ। স্বাগত জানাই ২০১৮ সালকে। সাথে সাথে সব বন্ধুদের জন্য রইল অনেক অনেক শুভ কামনা। নতুন বছর ছড়িয়ে দিক শান্তি ও সাফল্য। নতুন বছরে আমার অঙ্গীকার হচ্ছে নিয়মিত লেখার চেস্টা করা। দেখা যাক, তার কতোটা সম্ভব হয়! প্রথম দিন তাই শুরু হলো ভার্জিনিয়ার মেসন নেক স্টেট পার্কে কিছু সময় কাটিয়ে। তারই কিছু ছবি সাজিয়ে দিলাম আপনাদের জন্য। পড়ন্ত বিকেলে আমি যখন পার্কে যাই,বাইরের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রী (সেলসিয়াসে -৬)।  গাড়ী পার্ক করে সামনে হেঁটে এসে পটোম্যাক নদীর তীর। শীতের তীব্রতায় নদীও ঢেউ তুলতে ভুলে গেছে। জানুয়ারী মাসে ঠান্ডা পড়ে। তুষারপাতও হয়। গড়পড়তা এই সময় তাপমাত্রা দিনের বেলা ৪০ এর কাছে থাকে। এটা একেবারে রেকর্ড ভেঙ্গেছে। তা অনেক ব্যাপারেই মার্কিন রাজ্য ইদানীং রেকর্ড ভেঙ্গেছে।তাপমাত্রার এই নিম্নাঙ্ক তাই তেমন কোন ব্যাপারই না।

মে ৩১, ২০১২

অবসরের রঙ্গিন চিত্রমালা


Lake Accotink Park
অনেকদিন পর লিখতে গিয়ে হঠাৎ থমকে উঠলাম। ব্যস্ত জীবনে একটু লেখার সময় বের করতে পারছিলাম না অনেকদিন থেকে। ব্যস্ত জীবন বড্ডো যান্ত্রিক। তাতে সৃজনশীল মননের সুযোগ কোথায়? নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে অপরাধবোধ অপরাহ্নের ছায়ার মতো দীর্ঘ হতে থাকে। তাই সময়ের কড়া চোখ ফাঁকি দিয়ে লিখতে বসলাম। অবসরের মূহুর্ত্ত্বগুলোকে বড্ডো অগোছালো, অনেকটা এলোমেলো বাতাসের কাছে  দ্রুত পালিয়ে যাওয়া ছিন্ন পাতার মতো মনে হয়। এসবের মাঝ থেকে কিছু রঙ্গিন ছবি দিয়ে শুরু করলাম এই লেখা।

মার্চ ০২, ২০১২

চলচিত্রে যেভাবে স্হান করে নিল একুশের গান


প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী এলে যে গানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার জন্য সুমহান আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় সেই গান ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারীতে কিভাবে জহির রায়হান নির্মিত "জীবন থেকে নেয়া" ছবিতে চিত্রায়িত হলো সেই ইতিহাস আমাদের অনেকের অজানা।

ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১২

ওয়াশিংটন ডিসি'র পিঠা উৎসবে এক সন্ধ্যা


Click here to read in English

ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রো এলাকার অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় উৎসব হিসেবে পিঠা উৎসব গত সাত বছর থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভোলাপমেন্ট ইনক (বিসিসিডিআই)এর উদ্যোগে আয়োজিত বাৎসরিক এই উৎসবে এলাকার শত শত বাংলাদেশী পিঠাপ্রেমী যোগ দিয়ে থাকেন। সুদূর প্রবাসের মাটিতে হাতে বানানো পিঠার মধ্যে তারা খুঁজে পান বাংলাদেশের অকৃত্রিম ছোঁয়া।