পৃষ্ঠাসমূহ

জানুয়ারী ০৯, ২০১২

শতবর্ষী রবীন্দ্র গবেষক ডা: হিনোহারা শিগেআকি


শতবর্ষী রবীন্দ্র গবেষক ডা: হিনোহারা শিগেআকিকে নিয়ে সম্প্রতি লিখেছেন জাপানে প্রবাসী প্রবীর বিকাশ সরকার। ডা: হিনোহারা বর্তমান বিশ্বের প্রবীণতম চিকিৎসক হিসেবে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছেন। এছাড়া, তিঁনি একজন রবীন্দ্র গবেষক। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত বার্ষিকী নিয়ে বাংলাভাষীরা যখন ব্যস্ত, তখন জাপানের একজন রবীন্দ্র গবেষককে জানতে পেরে আমরা সত্যি গর্বিত।
লেখাটির কিছু অংশ প্রকাশিত হলো বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর-এর সৌজন্যে:
ডা. হিনোহারার ভাষায়, ১৭ বছর বয়সে তিনি তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের কবিতা প্রথম পাঠ করার সুযোগ লাভ করেন। সেই থেকেই রবীন্দ্রভক্ত তিনি। বিগত ৮৩ বছর ধরে তিনি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গবেষণা করে আসছেন। এরই প্রমাণ মিলল গত ১৪ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র সার্ধজন্মবার্ষিকী উপলক্ষে টোকিওর ভারতীয় দূতাবাসে আয়োজিত "জাপান এবং ভারতের সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের পুরোহিত রবীন্দ্রনাথের জীবন ধরে" শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠের মধ্য দিয়ে। কী নিয়ে আলোচনা করেননি তিনি! প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে রবীন্দ্রজীবনের ছেলেবেলা, সাহিত্যচর্চা, স্বাদেশিকতা, শিক্ষা সংস্কার, প্রকৃতিবন্দনা, আন্তর্জাতিকতাবাদ, আধ্যাত্মিকতা, ধর্মচিন্তা, ব্রহ্মজ্ঞান, সঙ্গীতসাধনা, শিল্পকলাচর্চা তাঁর আলোচনায় সংক্ষিপ্তভাবে উঠে এসেছে। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন ডা. হিনোহারাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। 
রবীন্দ্র গবেষক ডা. হিনোহারা খুব গুরুত্বসহকারে বলেন যে, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা দার্শনিক। তাই শিশুকালেই মাত্র ৮ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে দীর্ঘ কবিতা লিখতে সক্ষম হন যা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। শিশুকালের ভিতর দিয়ে তিনি একটি মানুষের পরিপূর্ণ ত্রিকাল জন্মপূর্ব, জন্মপর্ব এবং মৃত্যুপর্বকে অবলোকন করে ফেলেছিলেন। মৃত্যুকে তিনি কখনই ভয় পাননি, বরং একে ‘শ্যাম’ বা ‘দেবতা’ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।এটা খুব কম মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। মৃত্যুকে ‘বন্ধু’ও বলেছেন। তিনি এতই মনোবলের অধিকারী এবং আশাবাদী ছিলেন যে, স্ত্রী, কন্যা, পুত্র এবং দৌহিত্রী পর্যন্ত একে একে তাঁকে ছেড়ে পরলোকে চলে যাওয়ার পরও মনোবল হারাননি। তিনি শোক অনুভব করলেও শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েননি।
ডা. হিনোহারা বলেন, "রবীন্দ্রনাথ একেশ্বরবাদী ব্রাহ্মসমাজে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর ব্রহ্মজ্ঞান বহু অর্থে বৈচিত্র্যময়। তাঁর ধর্মচিন্তার মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সিক, ইহুদি, খ্রিস্টান, ইসলাম প্রায় সব ধর্মের অভূতপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। বিশ্বজনীনতার সুর তাঁর ব্রহ্মচর্চায় উদ্ভাসিত। তাই তিনি বিশ্বব্যাপী সর্বধর্মের মানুষের কাছে আজও গ্রহণযোগ্য মহান একজন মানুষ। তিনি যে দেশেই গেছেন নিবিষ্ট মনে সে দেশের সংস্কৃতিকে অনুধাবন করার চেষ্টা করেছেন। তাই তার সঙ্গীত এত সমৃদ্ধ। তাঁর গান এবং সুর চিকিৎসকদের জন্য সুচিকিৎসার মাধ্যম"।
শতবর্ষী রবীন্দ্র গবেষক ডা. হিনোহারা যদিওবা নির্দিষ্ট কোনো গ্রন্থ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রচনা করেননি কিন্তু তাঁর বেশ কয়েকটি গ্রন্থে রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারেও রবীন্দ্রনাথের কবিতার উদ্ধৃতি উপস্থাপন করেছেন। রবীন্দ্রদর্শন তাঁর চিকিৎসাধর্মকেও যে নানাভাবেই প্রভাবিত করে চলেছে তা আর না বললেও চলে। একটি নিবন্ধে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে "প্রকৃতিবিজ্ঞানী" বলে অভিহিত করেছেন। সেখানে বলেছেন, "রবীন্দ্রনাথের অফুরন্ত জীবনীশক্তি ধার করে আমরাও চিরঞ্জীব হতে পারি। রবীন্দ্রনাথের জীবনধারা থেকে শিক্ষার অনেক কিছু আছে"।
২০০৭ সালে লিখিত একটি নিবন্ধে রবীন্দ্র প্রসঙ্গে বলেন, তাই যদি হয় তাহলে বলতে হবে যে, রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা বাঙালি জীবনে শুধু নয়, বিশ্বমানব মননে একটি চিরস্থায়ী আবেদন। শেষের কবিতা পড়তে গেলেই রবীন্দ্রনাথকে নতুন করে উপলব্ধি করতে হয়, নতুন করে তাঁকে প্রথম থেকে চিনে নিতে উদ্বুদ্ধ করে। তাই তিনি চিরনতুন। 
সম্ভবত বর্তমান বিশ্বে শতবর্ষী নিবেদিতপ্রাণ রবীন্দ্রভক্ত ডা. হিনোহারার মতো আর দ্বিতীয় কেউ নেই,  যিনি আমাদেরকে রবীন্দ্র-বিষয়ে একাধারে আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত করতে পারেন।
জাপান প্রবাসী লেখক ও গবেষক
probirsrkr06@gmail.com    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন