পৃষ্ঠাসমূহ

অক্টোবর ০৬, ২০২২

প্রাণের বইমেলা ২০২২: ঢাকা’র প্রতিবিম্ব

“বিশ্বজুড়ে বাংলা বই” -এই শ্লোগান দিয়ে যখন তৃতীয়বারের মতো আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনের অদূরে ভার্জিনিয়ার স্প্রীংফিল্ডের হলিডে ইন-এ অক্টোবরের ২৯ ও ৩০ তারিখে দু’দিন ব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ডিসি বইমেলা নামের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনটি যখন এই ঘোষণা দেয়, তখন বইপ্রেমী সকলের মাঝে আনন্দের বন্যা শুরু হয়। সময় অতি অল্প, অথচ কর্মযজ্ঞ বিরাট। পাঠক, লেখক, প্রকাশক ও সকল সংস্কৃতিকর্মীদের একত্রিত করে একটি সফল আয়োজনের জন্য শুরু হয় নিয়মিত ও সাপ্তাহিক সভা, প্রতি বৃহস্পতিবার কর্মদিবস শেষে সন্ধ্যালগ্নে স্প্রিংফিল্ডের একটি সরকারী মিলনায়তনে আগ্রহী সবাই যোগ দিচ্ছেন। আলোচনা হচ্ছে বইমেলার আয়োজনের অগ্রগতি নিয়ে। সকল সফল আয়োজনের নেপথ্যে থাকে কিছু পরার্থবাদী মানুষের প্রাণান্তকর প্রয়াস-প্রচেষ্টা, এর কোন ব্যতিক্রম নেই ডিসি’র বইমেলার আয়োজনে। অর্থ দিয়ে, সময় দিয়ে, শ্রম দিয়ে সবাই চাচ্ছে প্রিয় বাংলায় লেখা বইয়ের অফুরন্ত ও রঙ্গিন সমারোহ। বাংলা আমাদের অহংকার, আর বই মেলা তার বহি:প্রকাশ। প্রবাসের মাটিতেও এই উচ্ছ্বাসে কোন ঘাটতি নেই।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রন্থমেলা, ২০২০

ঢাকার বই বা গ্রন্থমেলার আয়োজন হয় প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসে ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের সম্মানে। কিন্তু ঢাকার বই মেলা যখন সুদূর ওয়াশিংটন ডিসিতে এসে উপস্থিত হয়, তার অবয়ব ক্ষুদ্র ও সীমিত হলেও এর আবেদন অতি গভীর ও একান্ত প্রাণজ। এখানে বইমেলা প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৮-এ। কোভিড অতিমারির কারণে বইমেলা স্থগিত ছিল গত দু’বছর। সর্বশেষ বইমেলা হয়েছিল ২০১৯ সালে। বইয়ের সাথে রয়েছে আমার আত্মিক সম্পর্ক। “বই ভালবাসি” বলে অন্যরা হয়তো মোটেও ঈর্ষান্বিত হবেন না বলেই আমার প্রত্যাশা। এ ব্যাপারে না হয় ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ হবে অন্য সময়ে। 

একুশে গ্রন্থমেলার প্রবেশপথ
ঢাকা ছেড়েছি ১৯৯২ সালে। তারপর থেকে যাওয়া হয়নি আর ঢাকার বইমেলায়। শুধু ছবিতে, কাগজে ও টিভি’র পর্দায় দেখেছি ঢাকার একুশে বইমেলার বর্ণাঢ্য আয়োজন। আর অসম্ভব স্মৃতিকাতর হয়ে থাকতাম। 
২০২০ সালে জানুয়ারী মাসের শেষে হঠাৎ করে ঢাকা যেতে হয় একান্ত পারিবারিক কারণে। আমেরিকার দিকে ফেরার একদিন আগে কয়েক ঘন্টার জন্য একুশে’র বইমেলা (গ্রন্থমেলা) ঘুরে বেড়াবার সুযোগ হয়। 


বাংলা একাডেমীর ক্ষুদ্র পরিসর এখন ছড়িয়ে গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। খুব সাজানো গুছানো এই মেলা দেখে আমি মুগ্ধ। প্রায় দু’শতাধিক বইয়ের দোকান। কি বিশাল আয়োজন! মায়ের ভাষা বাংলার জন্য উৎসর্গিত শহীদরা ও ভাষা সৈনিকরা তাদের ত্যাগের জন্য আজ অহংকারবোধ করুক। তাঁদের ত্যাগ এখনও ভাস্বর। 

বাংলা যতোদিন থাকবে, ততদিন থাকবে তাঁদের অমরত্ব। বাংলা বইপ্রেমীরা তাই বইমেলার আয়োজন করছেন নিউইয়র্ক, টরেন্টো আর লন্ডনে। সেই সারিতে এখন যোগ দিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি। 

ডিসি’র বইমেলা ঢাকার একুশে গ্রন্থমেলার একখন্ড প্রতিবিম্ব। এক অভিন্ন চেতনার খন্ডচিত্র। যারা এবারের বইমেলায় যোগ দেবেন তারা দেখবেন লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের এক উৎসবমূখর সমাবেশ। থাকবে আলোচনা, সেমিনার, আবৃত্তি, গান আর দেশজ গান নিয়ে বিশাল র‍্যালী। প্রিয় কবি-লেখকদের সাথে একান্তে আলাচারিতা, তাদের মুখ থেকে তাদের ভাবনা ও না-বলা কথার প্রকাশ, ঝকঝকে বইয়ে সাজানো সারিসারি টেবিল, নতুন বইয়ের মোড়ক উল্টে দেখার আনন্দ আর নতুন বইয়ের পাগল করা মৌ মৌ গন্ধ সকল বইপ্রেমীকে অন্তরীণ করে রাখবে। এই চিরায়ত অনুভূতি নিয়ে আসছে বাংলা বইমেলা, সাথে রয়েছে শ্লোগান: “বিশ্বজুড়ে বাংলা বই”। সকল দুরত্ব ও সীমান্ত অতিক্রম করে আসছে প্রাণের বইমেলা আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি’র অদূরে। বই পড়ুন, বই কিনুন, বই ছড়িয়ে দিন। বই হোক আমাদের বেড়ে উঠার হাতিয়ার। বই হোক আমাদের ঈর্ষনীয় সহচর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন