কিন্ত এ বিজয় রূপকথার গল্পের মতো একদিনে হয়নি। এক নদী রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এ বিজয়ের সাথে মিশে আছে তিরিশ লক্ষ শহীদের উষ্ণ রক্ত। জানা অজানা অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রম। এর পরতে পরতে মিশে আছে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বজন হারানোর অশ্রুভেজা বেদনা। তাই, আমি আজ এসেছি বিজয়ের কথা শুনতে। সেসব সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা শুনতে। শুনতে এসেছি এই গর্বিত অর্জনের কথা। আবারও দেখতে চাই বিজয়ের সাহসী ও উৎসর্গিত মুক্তিযোদ্ধাদের চিত্রমালা।
দু:খজনক সত্য হচ্ছে এই বিজয়ের কথা নিয়ে আমরা বড্ডো বেশী বিভ্রান্ত। নতুন প্রজন্মের কাছে একটি নির্মোহ, নির্ভুল ও তথ্যনির্ভর ইতিহাস দেওয়ার রসদ অপর্যাপ্ত। কেন এ দেশ স্বাধীন হলো- এ প্রশ্ন বিজয়ের ৪০ বছর পর এক অহেতুক বিতর্ক ও ষড়যন্ত্রের শিকার। দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের ইতিহাস কেন বিতর্কিত হবে রাজনৈতিক সীমান্ত ঘিরে? কেন আমরা এতোটা বিভ্রান্ত, অন্ধ ও অবচেতন হয়ে থাকব? বিজয়ের ইতিহাস কেন হবে অবান্তর ও অহেতুক প্রশ্নের সম্মুখীন? পরাজিত শক্তি কেন শকুনের মতো খামচে ধরে থাকবে এদেশের বিজয়ের পাতা ও পতাকাকে? তাই, আজ খুব দরকার বিজয়ের ইতিহাসকে চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার। বিজয়ের ইতিহাস নিয়ে আর কোন বিভ্রান্তি নয়। চলুন, আজকের দিনে আবার নতুন করে শপথ নেই বাংলাদেশের বিজয়ের ইতিহাস চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার।
চব্বিশ বছরের পাকিস্তানী শোষণ, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সাড়ে সাত কোটি মানুষের ৭১-এর বিজয়ের কথা ড: মুহম্মদ জাফর ইকবাল মাত্র বাইশ পাতায় বাংলা ও ইংরেজীতে তুলে ধরেছেন "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" পুস্তিকায়। তাঁর বইয়ের বাংলা ও ইংরেজী সংস্করণটি পিডিএফ সংস্করণে পাওয়া যাচ্ছে। নীচের ছবি বা লিঙ্কে ক্লিক করে সংগ্রহ করে নিন এক কপি। তথ্যনির্ভর এবং সহজলভ্য এই বইটি দিয়ে শুরু হোক বিজয়ের গল্প বলা। চলুন শপথ নেই আর বিভ্রান্তি নয়।
৭১'এর বিজয় নিয়ে ইতিহাস সচেতন এক আলোকিত সমাজ নির্মাণে দরকার সকলের ছুটে আসার সকল রাজনৈতিক সীমান্ত থেকে। নিজের জন্ম নিয়ে যেমন প্রশ্ন বা তর্ক নেই, তেমনি এ দেশের জন্ম নিয়েও হতে পারে না বা থাকতে পারে না কোন বিতর্ক বা প্রশ্ন। সকালের সূর্যের মতো ধ্রুবসত্য এদেশের জন্মের ইতিহাস। শুধু দরকার সেই ইতিহাসকে সাহস ও গর্বের সাথে চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার। চলুন না, ৪০ বছর পর আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সেই বিজয়ের কথা ছড়িয়ে দিতে আমরা এগিয়ে আসি। যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে চান, তাদের জন্য কিছু অন-লাইনের রসদ এখানে দেওয়া হলো:
- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস (বাংলায়)
- মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর
- মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস (বাংলা ও ইংরেজী-পিডিএফ)
- বাংলাদেশ জেনোসাইড আর্কাইভ (ইংরেজী)
- আইসিএসএফ (ইংরেজী) (তথ্যনির্ভর গবেষণামূলক সাইট)
চলুন, এদেশের বিজয়ের কথা আমরা চারদিকে ছড়িয়ে দিই। আমরা পরাজয় কোন দিন মানিনি, কখনও মানব না। ৭১'এর বিজয়ের কথা হোক আমাদের প্রাণের কথা। নতুন করে শুরু হোক ৪০ বছর পরে লাল সবুজের বিজয়ের কথা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন